মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
আজাহারুল হক ॥ সম্প্রতি একটি বির্তকের আবর্তে ঘুরছে দোহার মাহমুদপুর ইউনিয়েনের রাজনৈতিক কথোপকথন ও ইউপি নির্বাচনের প্রচারণায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমেও তা বেশ চাওর হচ্ছে। সকালে ফেসবুকে প্রবেশ করতেই নজর পড়লো ইমরান হোসেন বুলবুলের দেয়া একটি স্ট্যাটাস। সেখানে মাহমুদপুরের একজন সাবেক চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাত কাজিম উদ্দিন পেশকারকে নিয়ে লেখাটা আমার দৃষ্টি গোচর হলো। প্রায় বিগত চার দশক ধরেই আমি তাকে চিনি বা জানি। কিন্ত তার জনঘৃণিত কোন কাজের বিষয় জানা নেই বা কারো কাছে শুনিনি। তবে প্রায় এক যুগ পর দোহারের মাহমুদপুর ইউনিয়নের নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে ঠিক তখনই জানতে পারলাম ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজিম পেশকার সাহেবের নাম ছিলো শান্তি কমিটির তালিকায়। যদিও তিনি সেই সময় পাকিস্তান সরকারের অধীনে পূর্ব পাকিস্তানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ছিলেন।
তথ্যসূত্রে জানায়, সেই সময় সরকার ও পাক বাহিনী গঠিত শান্তি কমিটিতে ওই সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারী, শায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের নাম পাক সেনারা শান্তি কমিটিতে রেখে পাক সরকারের পক্ষে সাফাই ও তাদেরকে যুদ্ধে সহায়তার জন্যই করেছিলেন। যদিও অনেকেই তার নাম স্বেচ্ছায় ওই তালিকায লিখিয়েছেন বলে আমার বোধগম্য নয়।
গত কয়েক দিন ধরেই আমি গুগল থেকে এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা করছিলাম। সেখানে দেশের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির নামও দেখলাম শান্তি কমিটিতে আছে। যদিও তারা সমাজে বা তার এলাকায় যুদ্ধকালীন সময়ে বির্তকিত কোনো কাজে জড়িত ছিলেন এমন কোনো নজির নেই। তাহলে কি আমি তাকে রাজাকার বা স্বাধীনতা বিরোধী বলবো? পাঠককে একটি বিষয়ে বুঝতে হবে পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে মানুষকে দায়িত্বে থেকে অনেক কৌশলী ভূমিকা পাল করতে হয়। আমার জিজ্ঞাসা কাজিম পেশকার সাহেব কি এমন কোনো পরিস্থিতিতে শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছিলেন? তা না হলে তার তিন ছোট ভাই সেই সময়ে পেশকার সাহেবের ভরণপোষণে থেকেই কিভাবে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন। ফেসবুক পেইজে এমন তথ্যই উল্লেখ্য করেছেন ইমরান হোসেন। তিনি লিখেছেন তার চাচা কাজিম পেশকার যখন একমাত্র চাকুরী জীবী তার অধীনে থেকেই ছোট তিন ভাই খলিলুর রহমান, সোহরাব উদ্দিন ও আব্দুল হান্নান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন।
প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি যদি রাজাকার হন তাহলে তার অধীনস্থ ছোট তিন ভাই কিভাবে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন? এই বিতর্কটা কি আমরা রাজনৈতিক বা সামাজিক কাজে ব্যবহার করছি কি না। বিষয়টি গভীরভাবে ভেবেই আমাদের কারো সম্পর্কে কিছু বলা উচিত। আর যদি সেটা হয় রাজনৈতিক কৌশল বা অপকৌশল তবে সেটা ভিন্ন কথা। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের অসাম্প্রদায়িক আর্দশ ধারণ করি। সত্য বলতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫দশক পেরিয়ে যাচ্ছে। আমরা জাতি হিসেবে স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে আজও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছতে পারিনি।
এ বিষয়ে দোহারের একজন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধের সময় কাজিম পেশকার পাক সরকারের চাকুরীজীবী ছিলেন। তিনি সরাসরি পাকবাহিনীর পক্ষে কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে ক্ষতি,কারো বাড়িঘরে লুটপাট বা নারীর সম্ভ্রমহানির মতো কোনো কাজে জড়িত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ আছে তা জানা নেই। তবে তার ভাইয়েরা সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
কাজিম পেশকারের মৃত্যুর প্রায় ৬/৭ বছর পর বাবা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিলেন এমন কথা মানতে নারাজ ছেলে মাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারুক। তার দাবী একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপকৌশল হিসেবেই এটা বলে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে সে(ফারুক) তার বড় ভাই মরহুম হুমায়ন কবীর, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান পান্নু আওয়ামীলীগের র্দুসময়ে আশি/নব্বইয়ের দশকে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী/নেতা হিসেবে(পদ-পদবী) সহ জড়িত ছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামীলীগের মাহমুদপুর ইউনিয়নে সক্রিয় দায়িত্ব পারন করেন তার ছোট চাচা আব্দুল হান্নান। তারপরেও ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
সর্বপরি বলতে চাই এই একটি বির্তক নিয়ে যাতে এলাকার সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিবেশ যাতে অস্থিতিশীল না হয় সে প্রত্যাশা সকলের কাছে। আসুন আমরা সঠিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যকে সত্য বলে রাজনীতির মাঠে জনগণের ভালবাসা অর্জনের মাধ্যমে এগিয়ে যাই। দেশকে ভালবেসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিপক্ষে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রসর হই।